বেসরকারি শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য সিড মানি হিসেবে দুই হাজার ২০০ কোটি বরাদ্দে সম্মতি দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ড’ দুই হাজার কোটি টাকা এবং ‘বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্ট’ ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পাবে।
গত ২৪ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের বাজেট অধিশাখার পৃথক দুটি সম্মতিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়। এতে সই করেছেন সিনিয়র সহকারী সচিব শাহরিয়ার জামিল।
অবসর সুবিধা বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, অবসর ও কল্যাণ সুবিধার ৭৫ হাজার আবেদন জমা রয়েছে। তবে সরকার যে অর্থ বরাদ্দ দিচ্ছে তা স্থায়ী তহবিল ও মূলধন তহবিল গঠনের জন্য। ফলে আবেদন করে দিনের পর দিন ঘুরতে থাকা শিক্ষক-কর্মচারীরা হঠাৎ করেই অর্থ ছাড় পেয়ে যাবেন, তেমনটি নয়। সরকার এ দুটি প্রতিষ্ঠানে স্থায়ী সমাধানের পথে হাঁটতে তহবিল গঠনে অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে।
এই টাকা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে এর লভ্যাংশ শিক্ষকদের অবসর ও কল্যাণ সুবিধার জন্য ব্যয় করা যাবে।
সম্মতিপত্রে বলা হয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সহায়তা কার্যক্রমের অধীন ‘বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী অবসর সুবিধা বোর্ডের অনুকূলে ‘স্থায়ী তহবিল’ গঠনে অন্যান্য অনুদান খাতে দুই হাজার কোটি টাকা এবং বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারী কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে মূলধন তহবিল গঠনে ২০০ কোটি টাকা অর্থ বিভাগের ‘অপ্রত্যাশিত ব্যয় ব্যবস্থাপনা খাত’ হতে বরাদ্দ প্রদানে নির্দেশক্রমে অর্থ বিভাগের সম্মতি জ্ঞাপন করা হলো। বরাদ্দকৃত এ অর্থ চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জারীকৃত সংশোধিত কর্তৃত্ব অর্পণ আদেশের অংশ হিসেবে গণ্য হবে।
সম্মতিপত্রের শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে, দুই প্রতিষ্ঠানেরই অধিক আয়ের লক্ষ্যে বোর্ডের অনুকূলে স্থায়ী তহবিল হিসেবে দুই হাজার ২০০ কোটি টাকা লাভজনক সরকারি সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে হবে।
সিকিউরিটি বা ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করার এক সপ্তাহের মধ্যে তার প্রমাণক অর্থ বিভাগে প্রেরণ করতে হবে। স্থায়ী তহবিল হিসাব থেকে বিনিয়োগকৃত ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষে তা নবায়ন বা পুনরায় ট্রেজারি বন্ড ক্রয় করতে হবে এবং ট্রেজারি বন্ডকৃত স্থায়ী তহবিল থেকে কোনো অর্থ অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ব্যয় করা যাবে না। শুধু সুদ বাবদ প্রাপ্ত অর্থ চলতি তহবিলে জমা করে সেখান থেকে ব্যয় নির্বাহ করতে হবে।
এদিকে, চলতি অর্থবছরে অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের এই অর্থ প্রাপ্তিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিক্ষক নেতৃবৃন্দ। শিক্ষক-কর্মচারি ঐক্যজোটের মহাসচিব মো. জাকির হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টের দুরবস্থা বিবেচনা করে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরই আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সাবেক শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের কাছে চিঠি দেই।
প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার নেতৃত্বে একাধিকবার উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করি। এরপর নতুন উপদেষ্টা অধ্যাপক সি আর আবরার দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তুলে ধরি। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়েরও এ ব্যাপারে খুবই আন্তরিক ছিলেন। আসলে তিনজনই শিক্ষকদের অবসরের অর্থপ্রাপ্তির বিষয়টি গুরুত্বসহকারে নিয়েছেন। তাদের সবাইকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বেসরকারি শিক্ষকদের বেতন-ভাতা কম। এরপর চাকরি শেষে যদি অবসরের টাকাটাও না পায় তাহলে দুরবস্থার অন্ত থাকে না। তাই আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, আগামী অর্থবছরে যেন প্রয়োজনীয় অর্থের পুরোটাই বরাদ্দ দিয়ে অবসর বোর্ড ও কল্যাণ ট্রাস্টকে শক্তিশালী করা হয়। যাতে শিক্ষকদের অবসরের টাকা পেতে ঘুরতে না হয়। আমরা প্রয়োজনীয় অর্থ পেতে ইতিমধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছি এবং আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’
খুলনা গেজেট/এমএনএস